এক টুকরো প্রেম
---সকাল বেলা নাক ডেকে ঘুমাচ্ছি।এমন সময় ফোনটা টিংটিং করে বাজতে শুরু করলো।ঘুমের ঘোরেই দুতিনবার ফোনটা কেটে দিলাম।একটু পরে আবার ফোন আসলো।ইচ্ছে না থাকার স্বত্বেও এক রাশ রাগ নিয়ে ফোনটা রিসিভ করেই,,
---কোন শালারে,এই ভোরবেলা এত সুন্দর ঘুমটা পানি করে দিলি?অভিশাপ দিলাম,তোর জীবনেও বিয়ে হবে না।
---আমি তোর শালা না,শালী হয়।আমি এক লাফে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম।এত সন্দর কণ্ঠ আমি জীবনেও শুনি নাই।
---আমি তো বিয়ে করিনি আর যাকে করবো তার কোন বোন নেই।তাহলে আমার শালী কোথা থেকে আসলো।
---ওই বজ্জাত ছেলে,তোর সাথে আজ সকাল দশটার সময় দেখা করার কথা ছিলোনা?
এইবার ঘুমের ঘোর কেটে গেলো।আর বুঝতে পারলাম এইটা সুমাইয়া আমার ফিউচার বউ।
---স্যরি সুমাইয়া!!আননোন নাম্বার থেকে ফোন দিয়েছো তাই চিনতে পারিনি।আচ্ছা এটা কার নাম্বার?
---রাখ তোর নাম্বার,আগে বল তুই আমার সাথে দেখা করার কথা বলে এখন অব্দি ঘুমাচ্ছিস তাইনা?
---স্যরি সোনা,আমার একটু ও মনে ছিলোনা।তুমি আর একটু ওয়েট করো আমি আসছি।
---এই যে খবরদার,তুই আমাকে সোনা বলে ডাকবি না।আমি আর তোর জন্য এক মুহূর্তও ওয়েট করতে পারবোনা।
---প্লীজ আমার ময়নাপাখিটা রাগ করেনা।আমার সত্যিই মনে ছিলোনা।জাস্ট টেন মিনিট সময় দেও আমাকে।
---না মানে না,আর এক সেকেন্ডও তোর জন্য ওয়েট করবোনা।তোর সাথে প্রেম করা আর কোলবালিশ নিয়ে জীবন কাটানোর মাঝে কোন পার্থক্য নেই।
---প্লীজ সুমাইয়া,এইবারের মত মাফ করে দাও।আর কখনোও এরকম ভুল হবে না প্রমিজ।
---তুই এর আগেও এমন কথা অনেক বার বলেছিলি।কিন্তু একটা বারের জন্যও প্রমিজ রাখতে পারছিলি না।
---বলছি তো শেষ বারের মত আর একটাবার বিশ্বাস করো।
---অনেক বিশ্বাস করে ঠকেছি কিন্তু আর পারছিনা।আমি তোর কাছে কি এমন চেয়েছি?বড় কিছু চাইনি তো।শুধু একটু বেশী ভালোবাসা চেয়েছিলাম।তোর হাতে হাতটা রেখে কিছু সময় কাটাতে চেয়েছিলাম।আর তুই কিনা সবটা সময় আমার সাথে মিথ্যা কথা বলিস
---প্লীজ একটু চুপ করো।
----আজ আমি বলবো আর তুই চুপ থাকবি।এতদিন চুপ ছিলাম বলেই আজ এইরকম একটা সময় আমাকে দেখতে হচ্ছে।
---আচ্ছা যা মন চায় বলো।
---দেখা করার কথা বলে তুই দিন রাত ঘুমাস।আর আমি বোকা মেয়ের মতো তোর প্রতিটা কথা বিশ্বাস করে ঘন্টার পর ঘন্টা শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকি।তোকে ফোন দিলে সবসময় ওয়েটিং কল এ পাই।তারপরও কখনোও তোর কাছে কিছু জানতে চাইনি।যদিও রিসিভ করস তাহলে একটু কথা বলার পরেই এটা করতে হবে,সেটা করতে হবে,আরও কত নানা অজুহাতে ফোনটা রেখে দেস।কখনোও কি জানতে চেয়েছিলি আমি কোনটা পছন্দ করি,কোনটা অপছন্দ করি।কখনোও তুই আমাকে বুঝতে চাস নি।তবে একটা কথা না বললেই নয়,"ইউ দ্যা বিগেষ্ট মিস্টেক অফ মাই লাইফ"।
কথাগুলো বলেই সুমাইয়া ফোনটা কেটে দিলো।
আমি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিলাম ওর প্রতিটা কথা বলার পিছনে মায়া ভরা কান্নার আওয়াজ।আমি নিস্তব্দ হয়ে সুমাইয়ার কথা গুলো শুনছিলাম।সত্যি বলতে ওকে কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।সুমাইয়ার প্রতিটা অভিযোগের জন্য আমি নিজেকে দায়ী করি।আমি সুমাইয়াকে জীবনের থেকেও অনেক বেশী ভালোবাসি।কিন্তু আমি ঘুমাতে খুব পছন্দ করি।সারা দিন রাত শুধু ঘুম আর ঘুম।একবার ঘুমানোর পর কেউ কল দিলে তার সাথে কথা বলার মতো মোড থাকেনা।যদিও বা রিসিভ করি তাহলে খুব বাজে ভাবে কথা বলি।বেশীরভাগ সময় এমনটা সুমাইয়ার সাথে করেছি।মেয়েটা একটা সত্যি কথা বলেছে কখনোও ওকে বুঝার চেষ্টা করিনি।তবে এটা বুঝি মেয়েটা আমাকে প্রচন্ডভাবে ভালোবাসে।
,,,,,,,,,
,,,,,,,,,
---তাড়াতাড়ি বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পরলাম সুমাইয়া আমার জন্য যে জায়গায় ওয়েট করছিলো।আমি জানি,যেহেতু সুমাইয়াকে একটু ওয়েট করতে বলছি সেহেতু মেয়েটা ঠিক আর একটু ওয়েট করবে যতই রাগ অভিমান করুক।এর প্রমাণ আমি আরও আগে অনেকবার পেয়েছি।সেই জায়গাই যাওয়ার পর যেটা মনে করেছিলাম সেটাই সুমাইয়া বেঞ্চের উপর বসে আছে।তার মনও জানতো যে আমি আসবো এখানে।কিন্তু একটা জিনিশ দেখে খুব খারাপ লাগলো সুমাইয়ার পায়ের সামনে অনেক গুলো গোলাপ ফুলের পাপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।হয়তো আমাকে দেওয়ার জন্যই গোলাপ গুলো নিয়ে আসছিলো।ঠিক সময় আসতে পারিনি বলে মনে হয় অভিমান করে ফুলের পাপড়ি গুলো ছিড়ে পায়ের কাছে ফেলে রাখছে।আমি আড়াল থেকে সবকিছু খেয়াল করছিলাম।মেয়েটা আমাকে যতটা ভালোবাসে ঠিক ততটাই গোলাপ ফুলকে ভালোবাসে।তাই এখানে আসার সময় রাস্তার পাশের নার্সারি থেকে কিছু গোলাপ ফুল কিনে নিয়ে আসলাম।এই গোলাপ ফুলই পারে এই গোলাপি মেয়ের রাগ অভিমান জল করে দিতে।মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি আসলো যে,মেয়েটাকে একটা বার বাজিয়ে দেখা যাক আমার জন্য কতটা পাগল।আড়ালে থেকেই পকেট থেকে ফোনটা বের করে সুমাইয়ার নাম্বারে ফোন দিলাম।একবার ফোন দিতেই রিসিভ করলো।কিন্তু কোন কথা বলছিলোনা।এখনোও কান্না করছে।ওর প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাস আমি ফোনে ফীল করতে পারছি।তখন আমি বয়েজ চ্যাঞ্জ করে কথা বললাম,,
---হ্যালো কে বলছেন আপনি?সুমাইয়া চুপ করে আছে।হয়তো ব্যাপারটা বুঝতে পারছেনা যে,আমার ফোন থেকে আমি ছাড়া আর কে ফোন দিবে।আমি আবার বললাম,,
---কি ব্যাপার ফোন রিসিভ করে কথা বলছেন না কেনো?আর এই ফোনটা যে ছেলের সে একটু আগে রোড এক্সিডেন্ট করেছে।
---হোয়াট কি বলছেন?আর আপনি কে,এই ফোনটা আপনার কাছে কি করে আসলো?
---আমি যেটা বলছি সেটাই সত্যি।ছেলেটার পাশে এই ফোনটা ছিলো।আর ডায়াল কলে গিয়ে দেখি লাষ্ট কথা আপনার সাথে হয়েছিলো।
---আমি বিশ্বাস করিনা।আপনি আমার সাথে ফান করছেন।
---দেখুন আমি আপনার সাথে কেনো সিরিয়াসলি বিষয় নিয়ে ফান করতে যাবো।তার আগে আপনি বলেন ছেলেটাকে চিনেন নাকি?
---ছেলেটার নাম ইমরান আমার বয়ফ্রেন্ড।এখন ও কোথায় আছে?
---সবাই ধরাধরি করে সদর হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছে।আপনি এখনি তার পরিবারকে জানিয়ে দেন।এই বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।আড়াল থেকে লুকিয়ে দেখি সুমাইয়া কাঁদতে কাঁদতে মাটিতে লুটিয়ে পরছে।যখন মাটি থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে থাকলো ঠিক তখনই আমি ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ি।হয়তো সুমাইয়া বুঝে গেছে আমি তার সাথে মজা করেছিলাম।সুমাইয়া আমার সামনে নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।কিন্তু ওর চোখ থেকে এক রাশি জল গাল বেয়ে টুপটাপ করে পড়তে থাকলো।সুমাইয়ার এই অবস্থা দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো।ভাবলাম এই রকম মজা করার জন্য একবার স্যরি বলে মাফ চেয়ে নেই।যখন ওর সামনে গিয়ে কিছু বলতে যাবো তখনই সুমাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকলো।ওর কান্না দেখে আমি আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না।টুপটাপ করে আমার চোখ থেকেও জল গড়িয়ে পড়ছে।সুমাইয়া কান্না করতে করতে আমাকে বললো,,
---কোত্তা,বান্দর,শয়তান এভাবে কষ্ট দিতে আমাকে ভালো লাগে?তিলে তিলে কষ্ট দেওয়ার থেকে একবারে গলা টিপে মেরে ফেলতে পারস না।আমি ওর ঠোট দুটো হাত দিয়ে চেপে ধরলাম।আর এইরকম কথা কখনোও মুখ দিয়ে উচ্চারণ করবেনা।আমি আজ থেকে আর কখনোও তোমাকে চোখের জল ফেলতে দিবো না।
---যদি আর কখনোও এইরম মজা করস তাহলে আমি তোকে খুন করে তারপর নিজেকে শেষ করে ফেলবো
---চুপ একদম চুপ,বললাম তো মনে থাকবে।আর কখনোও এই রকম ভুল হবে না।তখনও সুমাইয়া আমাকে জরিয়ে ধরে আছে।
---এই যে,এইভাবে জরিয়ে ধরে রাখলে তো আমার শরীরের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
তখন সুমাইয়া আমার বুক থেকে মাথাটা সরিয়ে নিলো।আমি এইবার মাটিতে দুহাটু গেড়ে সুমাইয়াকে গোলাপ ফুল দিয়ে আবার প্রপোজ করলাম।দেখি মেয়েটার খুশিতে গাল দুটো দিয়ে মুক্তা ঝরছে।এর থেকে ভালো রোমান্টিক মুহূর্ত আর কি হতে পারে।সুমাইয়া আবার আমাকে জরিয়ে ধরে আমার ঠোটের উপর তার ঠোট দিয়ে হামলা করা শুরো করলো।আমি তখন নিজেকে কন্ট্রোল রাখতে পারছিলাম না।সুমাইয়ার পিঠে খামচানো শুরু করলাম।একপর্যায়ে আমিও সুমাইয়ার ঠোট দুটো আমার ঠোট দিয়ে এমন ভাবে চেপে ধরে আছি কতক্ষণ ছিলাম জানিনা।পরে দেখি সুমাইয়ার ঠোট দুটো লাল হয়ে আছে।আর আমাকে বললো,
---ইতর একটা এই ভাবে ঠোটে কেউ কিছ করে?আর একটু হলে তো দম বন্ধ হয়ে মরেই গেছিলাম।ইস আমার ঠোট দুটার কি হাল করেছে।
---এইযে আমি আগে করেছি নাকি তুমি?
---আমি তো একটু করেই ছেড়ে দিতে চাইছি।কিন্তু নিজে কি করলেন।ছি তুমি কি দাঁত ব্রাশ করো না?কি বিশ্রী গন্ধ।মাঝে মাঝে মনে হয়ছিলো মুখের ভিতর বমি করে দেই।
---দেত কি আবুল তাবুল বলছো।আমি তোমার মত মানুষকে সরাসরি লজ্জা দিতে পারিনা কিন্তু তুমি পারো।বাধ্য হয়ে আমাকে সত্যিটা বলতে হল,আমার মনে হয়েছে তুমি এখানে আসার আগে পাচদিন আগে যে ইদুর মরেছিলো সেইটা দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে আসছো।ছি কি বাজে গন্ধ।কে জানে তোমার মুখে হালকা বমি করে দিয়েছই নাকি।সাথে সাথে সুমাইয়া আমাকে ইচ্ছে মত কিল ঘুষি আর সুযোগ বুঝে লাথিও মারা শুরু করলো।আমি ওকে ধরে আমার বুকের খাঁচায় বন্ধি করে নিলাম।আর ওই শিকারি পাখির মত খাচার ভিতরে নিজে থেকেই মাথা গুঁজে দিলো।
,,,,,,,,
,,,,,,প্রায় ঘন্টা তিনেক সুমাইয়ার সাথে ঘুরাঘুরি আর লাঞ্চ করলাম।এইবার সুমাইকে বাসায় পৌছে দেওয়ার জন্য একটা রিকশা খুঁজতে থাকলাম।অনেক্ষণ খুজার পরে রিক্সা মামার দেখা পেলাম।সুমাইয়াকে রিক্সায় তুলে আমি অন্য একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় যাচ্ছি।ওর আর আমার বাসা বিপরীতমুখী।যেহেতু দুজনের বাসায় কাছাকাছি সেহেতু আমি কখনোও সুমাইয়ার সাথে এক রিক্সা করে ওকে এগিয়ে দেই নি যদি এই অবস্থায় কেউ দেখে,তাহলে সুমাইয়ার বাহিরে বের হওয়া বন্ধ করে দিবে।
,,,,,,,
,,,,,,,
---বাসায় এসে শুয়ে আছি খুব ক্লান্ত লাগছে।ভাবলাম সুমাইয়াকে একটা ফোন দিয়ে দেখি ঠিকমতো বাসায় পৌছেছে কি না।ফোনটা হাতে নিয়ে কল দিতে যাবো এমন সময় "লো ব্যাটারি শাটডাউন"।তখন ফোনটা চার্জে দিয়ে একটু শুয়ে আছি।কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম টের পাইনি।
সন্ধ্যার সময় ঘুম থেকে উঠে ফোন অন করে দেখি আননোন নাম্বার থেকে ত্রিশ বার এলার্ট কল দেওয়া।কেমন জানি একটা ভয় কাজ করছিলো।সমস্ত শরীর কাপতে থাকলো।কাপা হাতে ফোন দিতে যাবো ঠিক এমন সময় ওই নাম্বার থেকে আবার ফোন আসলো,,
---হ্যালো কে বলছেন?দেখি চুপ করে আছে কিন্তু কান্না করছে।
---কি ব্যাপার কান্না করছেন কেনো।আর আপনি কে?
---ভাইয়া আমি রিয়া।
---হ্যা রিয়া বলো।আর তুমি এভাবে কান্না করছো কেনো?
---ভাইয়া আপু রোড এক্সিডেন্ট করেছে।ক্রিটিকাল কন্ডিশন।এখন সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে।
---হোয়াট!!কি বলছো তুমি।সুমাইয়ার কথামত আমার সাথে মজা করছো তাই না।
---না ভাইয়া মজা করছিনা।আপু সত্যিই এক্সিডেন্ট করেছে।আর আপনি এটা মজা ভেবে নিচ্ছেন।ছি ভাইয়া আপনার চিন্তা ধারা এতটা নিচু মানের জানতাম না।এই বলেই রিয়া ফোনটা কেটে দিলো।
,,,,,,
,,,,,,
---আমার বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।রিয়া এমন ভাবে কান্না করে কথা গুলো বলছিলো যে ওর প্রতিটা কথার পিছনে সত্য লুকিয়ে আছে।কিন্তু আমি এটা ভেবে কনফিউজড ছিলাম,আমি যেই মজাটা করেছিলাম ঠিক সেইম টু সেইম ঘটনা বাস্তবে কি করে সম্ভব।তখন আমার এক বন্ধু ফোন দিয়েও সুমাইয়ার কথা জানায়।আমার বুকের ভিতরটা ফেটে যাচ্ছিলো।মনে হয় আমার হার্টটা কেউ টেনে বের করে নিয়ে আসছে।তাড়াতাড়ি করে হাসপাতালে গেলাম।কেবিন নাম্বার জানা ছিলো না তাই রিয়াকে কল দিয়ে জেনে নিলাম।সেখানে গিয়ে দেখি,সুমাইয়ার সমস্ত শরীর ব্যান্ডেজ করা।আর মুখে মাক্স দেওয়া।সবাই তাকে দেখার জন্য কেবিনে আসলো।সবার সাথে আমি ও কেবিনে আসলাম সুমাইয়ার বন্ধুর পরিচয় দিয়ে।শুধুমাত্র সুমাইয়ার বোন রিয়া জানে আমরা একে অপরকে ভালোবাসি।একে একে দেখা করার পর সবাই চলে গেলো।ওর আম্মু-আব্বু,ভাই-বোন তারাও বের হয়ে গেলো। কিন্তু আমি ছিলাম, ওর মাথার পাশেই বসে ছিলাম।তখন সুমাইয়া আমাকে কিছু বলতে যাবে হয়তো।তা দেখে নার্স ওর মুখ থেকে মাক্স খুলে দিলো। তখন সুমাইয়া আমার ডান হাতটা ওর হাতের মধ্যে নিয়ে খুব শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।ও আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো। মনে হচ্ছিলো অনেকদিন ও হাসেনি।অনেক দিনের জমানো হাসি হাসতেছিলো।আমিও ওর দিকে তাকিয়ে আছি, ওর হাত দুটো শক্ত করে ধরে রেখেছি।কিন্তু আমার দু-চোখ দিয়ে তখন অশ্রু ঝড়ছিলো।সুমাইয়া আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,কাঁদছো কেন পাগল?আমার কিচ্ছু হয়নি,এইতো এখন আমি সুস্থ্য আছি। দেখো খুব দ্রুত সুস্থ্য হয়ে আমি তোমার সাথে আবার দুষ্টামি করবো, একসাথে ঘুরতে যাবো,একদম কান্না করবে না।
আমি সুমাইয়াকে চুপ থাকতে বললাম,কারন ওর কথা বলতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো আর সেটা ওর কথার ধরণ দেখেই বুঝতে পারছি।সুমাইয়া আমার হাত দুটো আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরলো।
---কি ভাবতেছো?আমি চলে গেলে তুমি থাকবে কি করে?আমি ছাড়া তুমি বাঁচবে কি করে?
---এসব কি বলছো,তোমার কিচ্ছু হয়নি।কিছু দিন যেতে দাও দেখবে তুমি আবার আগের মত সুস্থ হয়ে গেছো।
আমিও আবার সুমাইয়ার হাতটা শক্ত করে ধরলাম।
সুমাইয়া আবার আমাকে বলতে শুরু করলো, তোমাকে আমি অনেক জ্বালাই, তাই না? অনেক পাগলামিও করি।
আমি বললাম তোমার কাছে যেগুলো পাগলামি,দুষ্টামি আর জ্বালানো মনে হচ্ছে,
আমার কাছে সেগুলোই ভালোবাসা।
ও তখন বললো,অনেক ভালোবাসি তোমাকে।
এমন সময় নার্স এসে বললো,আর থাকা যাবেনা রোগীকে ঘুমাতে দিন।আমিও ঠিক আছে বলে,যেই উঠে যাচ্ছিলাম, ও তখন আরো শক্ত করে আমার হাতটা চেপে ধরে বললো, আরো কিছুক্ষন থাকো..! আমার নিঃশ্বাস নিতে ভালো লাগছে।তুমি চলে গেলে আমার খুব কষ্ট হবে...!
সুমাইয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম,এখন তোমাকে ঘুমাতে হবে। সকালে আমি আবার আসবো।
সুমাইয়া এখন কেঁদে দিয়ে বললো,আর কিছুক্ষন থাকোনা আমার পাশে। তুমি চলে গেলে একদম একা হয়ে যাবো আমার খুব কষ্ট হবে।আমারও চোখ দিয়ে পানি পড়তেছিলো।আমার খুব করে ইচ্ছে করছিলো, সারাটাজীবন ওর হাত দুটো এভাবেই ধরে বসে থাকি..!
আমি সুমাইয়াকে বললাম,ঠিক আছে আমি কেবিনের বাহিরেই আছি।এখন তুমি ঘুমাও,যখন ঘুম ভাঙবে আমাকে ডেকো।আমি আবার এসে তোমার সাথে গল্প করবো।তোমার আর একা লাগবেনা।
আমি বাহিরে এসে ঘুম ভাঙার পরে সুমাইয়ার ডাকের অপেক্ষায় ছিলাম ঠিকই...!
কিন্তু সুমাইয়া আর আমাকে ডাকেনি। তখনও জানতাম না,এটাই যে ছিলো সুমাইয়ার সাথে আমার শেষ কথা।ওর হাত দুটো আর কোনোদিন আমার হাত দুটোকে আঁকড়ে ধরবেনা। আর কোনোদিন আমার সাথে দুষ্টামি করবেন।কোনোদিন আমার সাথে পাগলামি করবেনা।
আমরা একদিন ঠিকই কিছু আপন মানুষকে কাঁদিয়ে চলে যায় কিন্তু স্মৃতি গুলো রেখে যায় কাউকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।হয়তো এটাই ভালোবাসা।
টুকরো_প্রেম
Writer: Rimon Mahmud.
..........
আরও গল্প পেতে সাথে থাকুন
Comments
Post a Comment
Thanks