গল্প:-মায়ের হাতের সোনার কাকন লেখক:মোঃ শামীম হোসেন
সাংবাদিক নিউজ২৪(একটি অনলাইন ভিত্তিক ব্লগ খবর প্রত্রিকা)
বিভাগ: সাহিত্য জগৎ
গল্প;মায়ের হাতে সোনার কাকন
লেখক:মোঃ শামীম হোসেন
মাতৃপ্রেম সকলের মধ্যে আছে, তবুও কোনো মানুষ সারাজীবন ধরে রাখতে পারে না সেই মমতাময়ী মা'কে।একেক জন একেক সময় হারায় সেই প্রিয় মানুষটিকে।আমাদে র সমাজে এমন অনেক মানুষ আছে যে নিজের মায়ের চেহারাও মনে করতে পারে না। তবে একটা অদ্ভুত সত্য কথা হচ্ছে, জন্মের আগে পিতা মারা গেলেও আমরা আলোর মুখ দেখতে পারি, কিন্তু মা মারা গেলেই আমাদের আর দেখা হবে না ধরণী। তাই এই মমতাময়ী মায়ের অবদান সন্তানের জীবনে অনেক বেশি, দুনিয়াতে বাবা ছাড়া জন্ম নেয়ার অলৌকিক শক্তি জ্বলন্ত প্রমাণ আছে, আমার যার প্রমাণ হিসেবে যিশু কে উদাহরণ দিতে পারি।মেরি কোনো পুরুষের স্পর্শ ছাড়া যিশুকে জন্ম দিয়ে এই সত্যের প্রমাণ করেছে। পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্ন থেকে তাই সন্তানের প্রতি মায়ের অধিকার বেশি।সন্তানদের মনেও মায়ের জন্যে অনেক অান্তরিক ভালোবাসায় ভরপুর। তাই মানুষের জীবনে সুখে দুখে শুধু একজন ব্যক্তি শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেব কাজ করে, যে কখনো বিপরীতমুখি আচোরণ করে না। সেই ব্যক্তি হলো মা। তেমনি অানন্দপুর গ্রামের এক দরিদ্র মা কুলসুম। সন্তানকে গর্ভে রেখে মারা যায় স্বামী। দুঃখ কষ্টে কাটে তার সংসার, ঠিক সময় মতো তার ঘর আলো করে জন্ম নেয় একটি মেয়ে সন্তান। মেয়েকে মানুষ করার আশায় কুলসুম দ্বিতীয় বারের মতো আর কোনো সংসার করেনি। দেখতে দেখতে মেয়ের বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন তাকে গ্রামের এক স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়। কুলসুম নিয়মিত মানুষের বাসায় কাজ করে জীবিকা আর মেয়ের পড়াশোনার খরচ জোগাড় করতে থাকে। মেয়ে বড় হবার সাথে সাথে খরচও বাড়তে থাকে। কিন্তু অপরদিকে কুলসুমের বয়স বাড়ার কারণে কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে। মেয়েকে মানুষ করতে দৃঢ় প্রত্যয় মনে তাই কিছুতে হার মানতে রাজি ছিলো না কুলসুম। দিনের পর দিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, মেয়েটিও বেশ বড় হয়েছে সপ্তম শ্রেণীতে পড়তো তখন,""নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর"" সেই কথার একটা কুপ্রভাব কুলসুমের উপর পড়ে, আস্তে আস্তে কর্মক্ষমতা হারিয়ে অসুস্থতার সঙ্গে যুদ্ধ করে একেবারে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে যায়।সেই অবস্থায় থেকেও সারা দিন মেয়ের কথা ভাবতো।মেয়েটি তখন মেট্রিক পাস করেছে, পাড়ার লোকের সহযোগিতায় ভর্তি হয়েছে একটি কলেজে, মায়ের সেবা, ঔষুধ সংসার খরছ চলতো মেয়েটির অর্থে, সে তার মায়ের কাজগুলো করতো মানুষের বাসায়। আবার রাতে পড়াতো পাড়ার ছেলে মেয়ে। কুলসুম জীবন যুদ্ধে বাকশক্তি হারিয়ে অবাক নয়নে চেয়ে থাকে দুর্দান্ত মেয়েটির দিকে। কিছু বলার শক্তি ছিলো না শুধু দু'চোখ হতে অঝরে জল ঝরাতো ঝর্ণার মতো, একদিন কলেজে স্যার বলছিলো শিক্ষাসফরের কথা, সকলে সিদ্ধান্ত দিলো ঝর্ণা দেখতে যাবে, স্যার হঠাৎ করে লক্ষ্য করে আনমনা এই মেয়েটির দিকে, স্যার ফাতেমাকে দাঁড়াতে বললেন। আজকের এই ফাতেমা হচ্ছে কুলসুমের একমাত্র মেয়ে। স্যার জিজ্ঞাস করলেন ঝর্ণা দেখার ব্যেপারে তোমার মতামত কি? প্রশ্নের জবাবে ফাতেমা অশ্রুসিক্ত নয়নে জবাবে বলেন স্যার আমার ঘরে বসলেই সবসময় দুটি বর্ণার জলধ্বনি শুনতে পাই, আর জলের চকচকানি দেখি। তাই সেই বিষয়ে আমার কোনো মতামত দেবার মতো নেই। ছুটির ঘন্টা বেজে গেলো আর কথা হয়নি সেই দিন। অন্য ক্লাসে স্যার ফতেমার যন্ত্রণাদায়ক কথার আলোচনা করতে করতে সকলের তার বাড়িতে যাওরার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কলেজ থেকে ফিরে মায়ের পাশে বসে বসে
মায়ের কাছে স্বপ্নের গল্প করছে ফাতেমা, মা আমি বড় হয়ে যখন তোমার স্বপ্নের রাজ্যে পা দেবো তখন তোমার দু'হাত ভরে দেবো সোনার কাঁকন দিয়ে। কুলসুম মেয়ের কথা শুনে করুণ কান্নায় ভেঙে পড়ে, কখন তার এই স্বপ্ন পূরণ হবে! আজ মেয়ের কথায় হঠাৎ মনে পড়ে গেল কুলসুমের সেই কাঁকনের কথা, যা অতি যত্ন করে রেখেছে মেয়ের বিয়েতে উপহার দিবে বলে। শত কষ্টের মাঝেও কুলসুম তার মায়ের হাতের কাঁকনটি আঁকড়ে রেখেছে, মা মেয়ের কথা শেষ হতে না হতে বাহির হতে কে যেনো ডাকছে ফাতেমাকে, বেড়িয়ে দেখে তার একঝাক বন্ধুবান্ধব আর কলেজের শিক্ষক, অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে বুকে জরিয়ে সান্তনা দেয় শিক্ষক বিমল বাবু। বিমল বাবু বেশ্ উদার এবং মহৎ মানুষ। কলেজে গিয়ে তিনি এক বোর্ড মিটিংয়ের আয়োজন করে সকলের কাছে বলেন ফাতেমার জীবন বৃত্তান্ত । সকলের সিদ্ধান্তক্রমে কলেজ কর্তৃপক্ষ ফাতেমার শিক্ষার দ্বায়িত্ব নেয়। সেই সহযোগিতায় ধিরে ধিরে বি এ পাস করে ফতেমা। চারিদিকে চাকরির জন্য ছুটাছুটি করতে শুরু করে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের সমাজে কিছু অসৎ লোকের জন্য হাজারো ফাতেমার কপালে জোটেনা কেনো চাকরি। ফাতেমার কাছে বাবার রেখে যাওয়া বাড়ি আর সোনার কাঁকন ছিলো শেষ সম্বল। মায়ের উন্নত চিকিৎসার জন্যে তার একটা ভালো চাকরির খুব দরকার। তাই ফাতেমা সেই দিন জীবনের সবচেয়ে বড় অপরাধ করেছিলো মাকে না জানিয়ে বাড়ির দলিল আর সোনার কাঁকন বন্ধক দিয়ে চাকরির জন্যে ঘুষ দেয়। আর সেই টাকায় তার চাকরি হয়, একটা প্রথমিক বিদ্যালয়ে, কুলসুম মেয়ের চাকরির কথা শুনে আনন্দের কান্নায় জোয়ার তুলে। সাড়া মহল্লার সবাই খুশি দুঃখিনীর দুঃখ হয়তো অবসান হবে।" সবার কপালে সুখ সয় না "এই কথাটি মিথ্য হলো না কুলসুমের জীবনে, মেয়ের সুখ দেখতে দেখতে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায় কুলসুম। সে বুঝতে পারে সে আর সুস্থ হবে না কোনো দিন। তখনি সিদ্ধান্ত নিলো নিজের শেষ সম্বল সোনার কাঁকনটা আজ মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে নিজেকে দায় মুক্ত করবে। কিন্তু "নিয়তি বড়ই নিষ্ঠুর " তার সামনে হয়তো হাজির হয়েছে মৃত্যুদূত ছটফট করছে বিছানায় আর কি যেন খুঁজছে, ফাতেমা প্রথম বেতন পেয়েছে বাজার হতে মায়ের জন্য নতুন কাপড় আর মিষ্টি নিয়ে ঘরে দরজায় দাঁড়িয়ে মায়ের এমন দৃশ্য দেখে তার বুঝতে বাকি রইলো না।তার মা সেই কাঁকনটা খুঁজছে। দরজা হতে দৌড়ে গিয়ে দোকান হতে নিয়ে আসে তার মায়ের সেই সোনার কাঁকন। এতক্ষণে কুলসুম আর দুনিয়াতে নেই। ফাতেমা বুঝতেও পারেনি তার জীবনের প্রথম বেতনের টাকায় কেনা শাড়িটা হবে তার মায়ের জীবনের শেষ শাড়ি। দরজায় দাঁড়িয়ে মা মা বলে ডাকছে কিন্তু মা যে চিরনিদ্রায় শায়িত হয়ে গেছে, ফাতেমার কান্নার জলে নিজেকে ভাসিয়ে অানন্দে কেনা শাড়িতে মা কে বিদায় দেয়, না ফেরার দেশে। জনম দুঃখিনী মনের ইচ্ছা অপূরণ রেখে চলে যায় পরপারে।
Comments
Post a Comment
Thanks