IELTS কী ও কেন, জেনে নিন এর খুঁটিনাটি



যারা উন্নত বিশ্বে পড়াশোনা করতে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন তারা IELTS শব্দটির সাথে সুপরিচিত। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য (UK) ও অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা প্রার্থীদের জন্য এটা অন্যতম প্রধান একটি যোগ্যতা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে ভিসা প্রাপ্তি পর্যন্ত সবখানেই প্রয়োজনীয় IELTS স্কোর থাকা অত্যাবশ্যক। স্কলারশিপ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও এটা একাডেমিক ফলাফলের সাথে যোগ্যতার মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হয়। এমনকি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট IELTS স্কোর থাকা বাধ্যতামূলক।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়,
প্রতিবছর ১৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবী উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য IELTS পরীক্ষায় অংশ নেন।
IELTS কী ও কেন, জেনে নিন এর খুঁটিনাটি


✔✔ IELTS:

IELTS (The International English Language Testing System) হচ্ছে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার আন্তর্জাতিক সনদপত্র। যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় তাদের জন্য যুক্তরাজ্য (UK) ও অস্ট্রেলিয়ায়সহ অনেক দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কিংবা ভিসা আবেদন করতে নির্দিষ্ট IELTS স্কোর অর্জন করতে হয়।

IELTS পরীক্ষা পদ্ধতি দুই ধরনের-
০১. একাডেমিক ও
০২. জেনারেল;
শিক্ষার্থীদের একাডেমিক IELTS এ স্কোর করতে হয়। তবে যে কেউ এ পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন।

✔✔ পরীক্ষা পদ্ধতির বিস্তারিত:

IELTS পরীক্ষা দু’টি মডিউলে দেওয়া যায়।
০১. একাডেমিক ও
০২. জেনারেল ট্রেনিং;

শিক্ষার্থীদেরকে পরীক্ষা দিতে হয় একাডেমিক মডিউলে আর কোনো কারিগরি বিষয় বা প্রশিক্ষণে অংশ নিতে যাওয়া প্রার্থীকে দিতে হয় জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে।

তবে সেকেন্ডারি স্কুলে ভর্তি কিংবা ইমিগ্রেশনের জন্যও পরীক্ষা দিতে হয় জেনারেল ট্রেনিং মডিউলে। সুতরাং ভালভাবে জেনে নিন আপনাকে কোন মডিউলে IESTS পরীক্ষা দিতে হবে। তবে দুটো পদ্ধতিতে পার্থক্য খুব সামান্য।

দুই ধরনের মডিউলেই চারটি অংশ থাকে-
০১. লিসেনিং;
০২. রিডিং;
০৩. রাইটিং ও
০৪. স্পিকিং;

✔✔ লিসেনিং (Listening):


IELTS পরীক্ষার প্রথম ধাপ লিসেনিং। এ ধাপে কথোপকথন শুনে আপনার বোঝার ক্ষমতা যাচাই করা হবে। লিসেনিং এর চারটি বিভাগে মোট ৪০ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়।

প্রথমে একটা প্যাসেজ ইংরেজিতে বাজিয়ে শোনানো হবে। সেটার উপর ভিত্তি করে আপনাকে উত্তর করতে হবে। অর্থাৎ বাজিয়ে শোনানো অডিও টেপে যে তথ্য দেওয়া হবে সেটা যদি ভাল মতো না বোঝেন তবে আপনি লিসেনিং এ ভাল না।

পরীক্ষা হয় ৩০ মিনিটের, শেষ ১০ মিনিটে উত্তরপত্রে উত্তর লিখতে হয়। একটি বিষয় কেবল একবারই বাজিয়ে শোনানো হয়। এতে সঠিক উত্তর বেছে নেওয়া, সংক্ষিপ্ত উত্তর কিংবা বাক্য পূরণ ইত্যাদি নানা ধরনের প্রশ্ন থাকতে পারে।

✔✔ রিডিং (Reading):

IELTS এর দ্বিতীয় ধাপ রিডিং। এ ধাপে তিনটি বিভাগে মোট ৪০ টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। সময় পাওয়া যায় এক ঘণ্টা। এ ধাপে প্যাসেজ পড়ে বোঝার ক্ষমতা টেস্ট করা হয়।

আপনাকে মোটামুটি বড় ৩/৪ টা প্যারাগ্রাফ দেয়া হবে, সেগুলো পড়ে অতি সাধারণ কিছু উত্তর দিতে হবে। এ জন্য আপনাকে প্যাসেজটা ঠিকমতো বুঝতে হবে। আর এতেই সময় ব্যয় হয় বেশি। ফলে বাকি প্যাসেজগুলোর উত্তর করার সময় কমে যায়। তাতে পরীক্ষার্থীর উপর কঠিন একটা চাপ পড়ে।

সময় নিয়ে শুরু হয় তাড়াহুড়ো; তাতে সবকিছু গুবলেট হয়ে যায় ও পরীক্ষাটা খারাপ হয়। অর্থাৎ এই পরীক্ষায় ভাল করতে হলে কিছু কৌশল রপ্ত করা জরুরি। সেক্ষেত্রে এ বিষয়ে পেশাদার ও মানসম্পন্ন কোচিংগুলোর সাহায্য নিতে পারেন।

তবে ইংরেজি মিডিয়ামের শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে থাকবেন এটা বলাই যায়। রিডিং ধাপেও বাক্য পূরণ, সংক্ষিপ্ত উত্তর কিংবা সঠিক উত্তর খুঁজে বের করা এই ধরনের প্রশ্ন থাকে। পড়ার সময়ই তাই গুরুত্বপূৃর্ণ অংশগুলো দাগান্বিত করুন। উত্তর করার সময় এটা কাজে দিবে।

✔✔ রাইটিং (Writing):

IELTS এর তৃতীয় ধাপ হলো রাইটিং। এখানে যাচাই করা হয় আপনি কতটুকু কল্পনাশক্তি খাটাতে পারেন এবং একটা বিষয়ের উপরে কেমন লিখতে পারেন। এক ঘণ্টায় দুটি প্রশ্নের উত্তর লিখতে হবে।

মনে রাখবেন দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে প্রথম প্রশ্নের চেয়ে দ্বিগুণ নম্বর থাকে। তাই শুরুতেই দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর ভালোভাবে লিখতে পারেন। প্রথম প্রশ্নে মোটামুটি ২০ মিনিট সময় দিয়েই দ্বিতীয়টা শুরু করুন।

প্রথমটিতে অন্তত ১৫০ শব্দের উত্তর লিখতে হবে। তবে দ্বিতীয় প্রশ্নটির উত্তর দিতে ৪০ মিনিট সময় পাওয়া যায়। অন্তত ২৫০ শব্দ লিখতে হয়। শব্দসংখ্যা একটু বেশি হলেও ক্ষতি নেই। কিন্তু কম হলে নাম্বার কমে যাবে।

প্রথম প্রশ্নটিতে সাধারণত চার্ট বা ডায়াগ্রাম থাকে। সেটা থেকে নিজের কথায় বিশ্লেষণধর্মী উত্তর লিখতে হয়। আর দ্বিতীয় প্রশ্নটিতে সাধারণত কোনো বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে মত বা যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়।

✔✔ স্পিকিং (Speaking):

IELTS এর চতুর্থ ধাপ হলো স্পিকিং। এ ধাপে কোনো লেখালেখি নেই। আপনাকে নির্দিষ্ট দিনে পরীক্ষাস্থলে (সাধারণত ব্রিটিশ কাউন্সিলে) গিয়ে দু’তিনজন পরীক্ষকের সামনে বসতে হবে। তাঁরা আপনাকে বিভিন্নভাবে ইংরেজিতে প্রশ্ন করবেন আর আপনি উত্তর দিবেন।

তিনটি অংশে মোটামুটি ১১ থেকে ১৪ মিনিটের পরীক্ষা হয়। প্রথম অংশে পরীক্ষার্থীকে কিছু সাধারণ প্রশ্ন করা হয়, যেমন- পরিবার, পড়াশোনা, কাজ, বন্ধু ইত্যাদি সম্পর্কে। চার থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে উত্তরগুলো দিতে হয়।

দ্বিতীয় অংশে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দুই মিনিট কথা বলতে হয়। তবে তার আগে চিন্তা করার জন্য এক মিনিট সময় দেওয়া হয়। তৃতীয় অংশে চার থেকে পাঁচ মিনিটের জন্য পরীক্ষকের সঙ্গে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে কথোপকথন চালাতে হয়।

✔✔ কত স্কেলে কত স্কোর:

IELTS এর স্কোর দেওয়া হয় এক থেকে নয় এর স্কেলে। চারটি অংশে আলাদাভাবে ব্যান্ড স্কোর দেওয়া হয় এবং সেগুলোর গড় করে সম্পূর্ণ একটি স্কোর দেওয়া হয়।

IELTS এ কৃতকার্য বা অকৃতকার্য হওয়ার কোনো ব্যাপার নেই। প্রয়োজনীয় স্কোর এর জন্যই শিক্ষার্থীরা এ পরীক্ষা দেয়। যেমনঃ ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে সাধারণত সাড়ে ছয় থেকে সাড়ে সাত স্কোর তুলতে হয়। আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা আলাদা ব্যান্ড স্কোরও ঘোষনা করা থাকে।

সেক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্কোর যত ভালোই হোক না কেন, নির্দিষ্ট একটি ব্যান্ড এ স্কোর কমে গেলে আর ভর্তি হতে পারবেন না। তাই পরীক্ষা দেওয়ার আগেই জেনে নিন আপনার প্রয়োজনীয় স্কোর কত হতে হবে।

মনে রাখবেন,
IELTS স্কোরের মেয়াদ থাকবে দুই বছর। এরপর আবার পরীক্ষা দিতে হবে।

দেখুন IELTS স্কোরসমূহের স্বীকৃতির পর্যায়-

ব্যান্ড ৯- দক্ষ ব্যবহারকারী;
ব্যান্ড ৮- খুব ভালো ব্যবহারকারী;
ব্যান্ড ৭- ভালো ব্যবহারকারী;
ব্যান্ড ৬- পর্যাপ্ত ব্যবহারকারী;
ব্যান্ড ৫- পরিমিত ব্যবহারকারী;
ব্যান্ড ৪- সীমিত ব্যবহারকারী;
ব্যান্ড ৩- অতিরিক্তমাত্রায় সীমিত ব্যবহারকারী;
ব্যান্ড ২- ব্যবহারকারী নয়;
ব্যান্ড ১- যারা অপ্রাসঙ্গিক উত্তর দিয়েছে বা কমিউনিকেট করতে ব্যর্থ হয়েছে;
ব্যান্ড ০- পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেনি বা উত্তর দেয়নি;

✔✔ পরীক্ষা পরিচালনা ও ফলাফল প্রদান:

ইউনিভার্সিটি অব ক্যামব্রিজ, ব্রিটিশ কাউন্সিল ও আইডিপি অস্ট্রেলিয়া যৌথভাবে পরিচালনা করে IELTS পরীক্ষা।

এই পরীক্ষায় নীতি নির্ধারক ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বিশ্বব্যাপী পরীক্ষা পরিচালনা ও শিক্ষার্থীদের কাছে তথ্য পৌছে দেওয়ার মূল ভূমিকা পালন করছে বিট্রিশ কাউন্সিল ও আইডিপি অস্ট্রেলিয়া।

সারা বিশ্বে একই প্রশ্নপত্র ও অভিন্ন নিয়ম পরিচালিত হয়। ব্রিটিশ কাউন্সিলের তত্ত্বাবধানে প্রতি মাসে তিনবার করে বছরে ৩৬ বার IELTS পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে নিয়মিত ও অনিয়মিত পরীক্ষার্থীরা কাঙ্ক্ষিত স্কোর পাওয়ার আগ পর্যন্ত যতবার খুশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেন।

সাধারণত IELTS এর ফল প্রকাশিত হয় পরীক্ষার ১৩ দিন পর। ব্রিটিশ কাউন্সিল এর ওয়েবসাইট থেকে পরীক্ষার্থীর রোল নম্বর, পাসপোর্ট নম্বর, জন্মতারিখ ও পরীক্ষা প্রদানের তারিখ দিয়ে সহজেই জানা যায় IELTS পরীক্ষার ফলাফল। তাছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে সরাসরিও ফলাফল সংগ্রহ করা যায়।

কোন পরীক্ষার্থীর ফলাফলে সন্দেহ থাকলে ফলাফল প্রকাশের ছয় সপ্তাহের মধ্যে ‘এনকুয়ারি অন রেজাল্ট’ এর জন্য আবেদন করা যায়। এটা করতে অবশ্য নির্দিষ্ট ফি প্রদান করতে হয়। তবে ফলাফলে ভুল ধরা পড়লে ওই টাকা ফেরত পাওয়া যায় এবং ৬ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই ব্রিটিশ কাউন্সিল থেকে পুনঃনম্বরকৃত ফলাফল প্রকাশ করে শিক্ষার্থীকে সেটা জানিয়ে দেয়।

কোন কিছু জানতে আমাকে ফেসবুকে জানান
ফেসবুক  

Comments

Popular posts from this blog

HSC all text book Download | এইচএসসি সব পাঠ্য বই ডাউনলোড

একাদশ দ্বাদশ শ্রেণীর বই সমূহ ডাউনলোড – HSC Books Download pdf

আপনি 2022 সালে এই বক্স অফিস হিটগুলির কয়টি দেখেছেন?