আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহ.)'র সংক্ষিপ্ত পরিচয়


বার আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী থানার অন্তর্গত মেখল নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত সৈয়দ পরিবারে ১৩২৩ হিজরী, ১৩১৩ বাংলা এবং ১৯০৬ ইংরেজীতে
কোন এক শুভ মুহূর্তে মোজাদ্দেদে দ্বীন
ও মিল্লাত, ইমামে আহলে সুন্নাত, আল্লামা গাজী সৈয়দ মুহাম্মদ আজিজুল হক শেরে বাংলা (রহ.) জম্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হযরত মাওলানা শাহসূফী সৈয়দ আব্দুল হামিদ
আলকাদেরী (রহ.)। শেরে বাংলা (রহ.) বাল্যকাল থেকেই অতি মেধাবী ও সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। শৈশবকালে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা
আপন পিতার নিকট লাভ করেন অতঃপর তিনি হাটহাজারী মাদ্রাসা-এ-মঈনু ল ইসলামে ভর্তি হন। ঐ মাদ্রাসা দেওবন্দী কওমি নিয়ন্ত্রিত হলেও তৎকালে কয়েকজন সুন্নী আক্বীদার
আলেমও সেখানে শিক্ষকতা করতেন। উক্ত মাদ্রাসায় অধ্যয়ন কালে দেওয়ান নগর নিবাসী প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল জলিল (রহ.) কে প্রিয় শিক্ষক হিসেবে লাভকরেছিলেন।
অতঃপর তিনি উচ্চ শিক্ষা অর্জনের জন্য হিন্দুস্থানে গমন করেন। দিল্লীর বিখ্যাত ফতেহ্পুর আলীয়া মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে আরবী,
উর্দু, ফার্সি ভাষার লিখিত বিভিন্ন শাস্ত্রে উপর অসাধারণ পাণ্ডিত্য ও বুৎপত্তি অর্জন করেন। উক্ত মাদ্রাসার পিন্সিপ্যাল শেরে বাংলা (রহ.) এর মেধাশক্তি দেখে মুগ্ধ হয়ে তাঁর খরচ বহন করার ঘোষণা দেন। অতঃপর হিন্দুস্থান থেকে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ইসলামের প্রকৃত আদর্শ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের
খেদমতে নিয়োজিত হন। তিনি হাটহাজারী এমদাদুল উলুম আজিজিয়া সুন্নিয়া মাদ্রাসা ও রাউজান, রাঙ্গুনিয়া সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন
থানায় অনেক মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন।
★সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও
আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহ.) এর অবদান
ছিল অপরিসীম। তিনি তদানীন্তন বৃটিশ আমল হতে পাক-ভারত বিভক্তির পর প্রথম পাক ভারত মহাযুদ্ধের সময় পর্যন্ত একাধারে সুদীর্ঘ সতের বৎসর নিজ এলাকা মেখল ইউনিয়নের
চেয়ারম্যান ও তৎকালীন ফুড কমিটির
প্রেসিডেন্ট পদ অলংকৃত করেন। এমনকি
চেয়ারম্যান ইলেকশনের পূর্বে মুফতি
ফয়জুল্লাহ তার অনুসারীদের উদ্দেশ্য বলে, “তোমরা শেরে বাংলাকে ভোট দেবে” তাকে এর কারণ- জিজ্ঞেস করা হলে উত্তর দেয়, শেরে বাংলার সাথে আমার যে বিরোধ
তা অন্য ব্যাপার কিন্তু এই মুহূর্তে তাঁর
মত সুবিচারক ও ন্যায় বন্টনকারী বিশ্বস্ত
কোন লোক তোমরা পাবে না।
★শেরে বাংলা উপাধি লাভঃ চল্লিশ
দশকের প্রারম্ভে চট্টগ্রামের প্রখ্যাত আলেম
আল্লামা আব্দুল হামিদ ফখরে বাংলা (রহ.) অনেক আলেমসহ কাদিয়ানীদের সাথে আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদে মোনাজেরায়
অংশগ্রহণ করেছিলেন। সেখানে দীর্ঘক্ষণ ধরে প্রশ্ন-উত্তর চলাকালে আল্লামা গাজী শেরে বাংলা (রহ.) তাদের উত্তাপিত প্রশ্নের উত্তর প্রদান পূর্বক সেই বিষয়ে প্রশ্ন করতেই আল্লাহর অসীম কুদরতে কাদিয়ানীরা শোচনীয়
পরাজয় বরণ করে। অতঃপর বাতিলপন্তিরা পরাজিত হয়ে মজলিস ত্যাগ করে। উপস্থিত সকলে তাঁর এরূপ বুদ্ধিদীপ্ত জ্ঞান ও দুর্দান্ত সাহস দেখে অবাক হয়ে যায়। তখন আল্লামা
আব্দুল হামিদ ফখরে বাংলা (রহ.) সবার
সমর্থন নিয়ে ঘোষণা করেন, আজ আমি
এই সভায় আলেম সমাজের প্রক্ষ থেকে ঘোষণা
দিচ্ছি মাওলানা সৈয়দ আজিজুল হক আলকাদেরীকে “শেরে বাংলা” উপাধিতে ভূষিত করা হল। তখন
উপস্থিত জনতা শ্লোগানে শ্লোগানে
আকাশ- বাতাস মুখরিত করে তুলে। এ
ছাড়াও তিনি বাতিলপন্তিদের বিরুদ্ধে অসংখ্য
মোনাজেরায় অংশগ্রহণ করে বিজয় লাভ করে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতকে সমুন্নত
রেখেছেন। অনেক সময় তাঁর হাতে পরাজয় বরণকরে বদ-আক্বীদা পোষণকারীরা তাঁর উপর হামলা করে রক্তাত্ব করে দেয়। একবার ডাক্তার মৃত
ঘোষনার আট ঘন্টা পর তিনি জীবিত হয়ে উঠে বসে পড়েন।
★সৌদিসরকারেরপ
ক্ষথেকেরাজকীয়গ্র্যন্ডমুফতী
কতৃকশেরেইসলা মওশেরেবাংলাউপাধিলাভ ।
১৯৫৭ সালে মোজাদ্দেদে মিল্লাত, শামসুল
মোনাজেরীন,তাজুল ওলামা হযরতুল আল্লামা গাজী শেরে বাংলা রহঃ ২য় বার পবিত্র হজ্ব পালন উপলক্ষে সৌদিআরব গমন করেন। ইতিমধ্যে হাটহাজারীর খারেজি মাদ্রাসার ওহাবীরা হযরত শেরে বাংলা রহঃ কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে। তারা তাদের বন্দুবর ও পৃষ্ঠপোষক সৌদি সরকারকে পূর্বাণ্হে চিঠির মাধ্যমে হযরত শেরে বাংলা রহঃ এর সৌদি আরব গমন সম্পর্কে অবহিত করে এবং সৌদি কতৃপক্ষকে প্ররোচনা দেয় যে, এই লোক মুসলমানদেরকে কাফের বলে।
সুতরাং তাঁকে গ্রেফতার করা হোক। নির্ধারিত দিনে নির্দিষ্ট সময়ে হযরত শেরে বাংলা রহঃ এয়ারপোর্ট থেকে জেদ্দা পৌঁছার পূর্বেই সৌদি পুলিশ তাঁকে এরেষ্ট করে। পুলিশ জানায়, “আপনার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে।” হযরত শেরে বাংলা রহঃ দৃঢ় কন্ঠে তাদেরকে বলেন, “আমি তো হজ্বে বায়তুল্লাহ ও মদীনায় হাযিরা দিতে এসেছি'” অতপরঃ হুজুরকে সৌদি সরকরের গ্রান্ড মুফতি সৈয়দ আলবী সাহেবের নিকট নিয়ে যাওয়া হয়। গ্রান্ড মুফতি হুজুরকে প্রশ্ন করেন. “আপনি কি সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা?” হযরত শেরে বাংলা রহঃ হ্যাঁ সুচক জবাব দিলেন। মুফতী সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি মু’মিন মুসলমানদের কাফির বলেন? হযরত শেরে বাংলা তীক্ষ্ণ কন্ঠে জবাব দিলেন, “আমি তো মু’মিন মুসলমানদের কাফির বলি না। কিন্তু কিছু কিছু মুসলমান নামধারী লোককে কাফের বলি। যারা তাদের কিতাবে কুফরী কালাম লিখেছে।” উদাহরন স্বরূপ তিনি কিতাবের উদ্ধৃতি সহকারে ‘আল্লাহ পাক মিথ্যা কথা বলতে পারেন’ নাউযুবিল্লাহ্ -ইত্যাদি ইত্যাদি ওহাবীদের বিভিন্ন জঘন্য ও কুফরী উক্তির উল্লেখ করলেন। এতে মুফতী সাহেব প্রমান জানতে চাইলেন। হযরত শেরে বাংলা রহঃ তাঁর সাথে বহনকৃত ওহাবীদের লেখা বিভিন্ন কিতাব খুলে প্রমান উপস্হাপন করলেন। অতপর গাজী শেরে বাংলা এর সাথে সমস্ত আক্বিদা বিষয়ক মাসায়েল নিয়ে উক্ত গ্র্যন্ড মুফতি সাহেবের সাথে দীর্ঘক্ষণ বাহাছ হয়। হযরত শেরে বাংলা রহঃ এ সমস্ত কুফরী কালামের বিরুদ্ধে এবং সঠিক আক্বীদার উপর সারগর্ভ যুক্তি প্রদর্শন করেন। হুজুরের সাহসিকতাপূর্ণ অসীম জ্ঞানের কাছে মুফতি সাহেব সম্পূর্ণ পর্যদস্হ ও পরাজিত হন।হুজুরের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে গৃহীত সমস্ত ওয়ারেন্ট প্রত্যাহার করা হয় এবং তাঁকে সম্মানের হজ্ব পালন করার অনুমতি প্রদান করা হয়।

Post a Comment

Thanks
© Priyo blog. All rights reserved. Premium By FC Themes